Review From Hasan Ahammed Sohag

টিজিবির সাথে স্ব-পরিবারে সাজেক ভ্রমন অভিজ্ঞতা
অনেক দিনের স্বপ্ন ছিলো পরিবার নিয়ে সাজেক যাবো, মেঘের ভেলায় ভাসবো! ওয়াইফকে অনেকবার পাহাড় ভ্রমনের গল্প শুনিয়েছি। তারও খুব ইচ্ছে ছিলো জীবনে একবার হলেও যেনো মেঘের দেশে যাওয়ার সুযোগ হয়। কয়েকবার প্লান করলেও গ্রুপের ইভেন্ট টাইমের সাথে আমাদের সময় মিলাতে পারতাম না। এমন নানা জটিলতায় সাজেক ভ্রমন অধরাই থেকে গিয়েছিলো।
অক্টোবরের ৫ তারিখ থেকে স্কুলে পূজোর ছুটি। অনেকগুলো ট্রাভেল গ্রুপ খুজে খুজে দেখলাম ৫-১০ অক্টোবরের মধ্যে কোন ইভেন্ট আছে কি-না। কিন্তু পেলাম না! প্রায় সব ইভেন্টই প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে শুরু হয়ে রবিবার সকালে শেষ হয়। মেনে নিলাম এবারের ছুটিও এমনই বাসায় বসেই কেটে যাবে।
এমন বিষন্ন মনে ফেসবুক স্ক্রলিং করতে করতে চোখের সামনে ভেসে উঠলো শাহাদাৎ হোসাইন ভাইয়ের টিজিবি গ্রুপের পোস্ট "পূজার ছুটিতে শরতের জমাটবাধা মেঘ দেখতে সাজেক ভ্রমন" মনে হলো আমার স্বপ্ন পূরনের সুযোগ এখনই। ইভেন্টের তারিখ, পূজোর ছুটি সবকিছুই মিলে গেলো। আর দেরী না করে সাথে সাথেই Hasnat Kiron ভাইয়ের সাথে কথা বলে সাজেক ট্রিপের সবকিছু ফাইনাল করে ফেলি।
ট্রীপের সময় যত নিকটে আসছে, সাথে সাথে উৎসাহ ও উৎকন্ঠা দুটোই বাড়ছে কারন এই প্রথম ৪ বছরের বাচ্চাসহ বরিশাল থেকে এতদূরের পথে ভ্রমনের সাহস করেছি! আমার দুঃশ্চিন্তার কথা কিরন ভাইয়ের সাথে শেয়ার করেছি। তিনি আমাকে সব ধরনের আশ্বস্ত করেছেন, মূলত তার কথাতেই আমি ট্যুর করতে সাহস পেয়েছি।
০৭ তারিখ রাত এগারোটায় কলাবাগান থেকে খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে আমাদের বাস ছাড়ে। গাড়িতে উঠেই দেখা পেলাম ট্যুরের হোস্ট সদা হাস্যোজ্বল, মায়াবী চেহাড়ার অধিকারী Sohag Sun Moon ভাইয়ের। সে আমার আগেই পরিচিত থাকায় মনে আরো সাহস বেড়ে গেলো।
এরপর বাকীটা ইতিহাস। ভুলে গেলাম সব উৎকন্ঠার কথা। ট্যুরমেটরা একে অপরের পরিচিত হয়ে গল্পে মেতে উঠলো। সাজেকের পথে পাহাড়ি উচুনিচু রাস্তা এবং চারদিকে নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য দেখতে দেখতে চলে এলাম স্বপ্নের সাজেক ভ্যালী। প্রতিটি মুহুর্ত ছিলো স্বপ্নের মতোই। সারাদিনই ঘুরলাম। রাতে আদ্রিকা কটেজের সামনে বিশাল বারান্দায় চলছে সকলের সাথে পরিচয় পর্ব, আড্ডা ও গান বাজনা।
আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি সোহাগ ভাইকে, এত কম বয়সে প্রতিটি ক্ষেত্রে একজন যোগ্য অভিবাবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। ট্যুরের প্রতিটি সদস্যের প্রতি খুব কেয়ারিং ছিলো। কারো খাওয়া বাকি আছে কি-না? সকলে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছে কিনা? রুমে কোন সমস্যা আছে কি-না? এসব দেখতে দেখতেই ব্যাস্ত সময় পার করছে। শেষ বিকেলে বউ-বাচ্চাসহ যখন কংলাক চুড়ায় উঠতে সাহস পাচ্ছিলো না ঠিক তখনই সোহাগ বললোঃ "আমি তো আছি, কোন টেনশন নেই। প্রয়জনে আমি হেল্প করবো"। শেষ পর্যন্ত সোহাগের মনোবলে কোন সাহায্য ছাড়াই বউ বাচ্চা নিজেরা হেটে হেটে কংলাক চুড়ায় আরোহন করে। সোহাগের মেধা, ধৈর্য্য ও মনোবল তার ভবিষ্যত জীবনকে আলোকিত করবে এটাই আমার বিশ্বাস। খুব শীঘ্রই আবার দেখা হচ্ছে টিজিবির কোন ইভেন্টে।
বিশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি টিজিবির প্রতি। যাদের এক ঝাক পরিশ্রমী তরুণ দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে সুন্দর ও সু-শৃংখল ভাবে হাজার হাজার মানুষের স্বপ্ন পূরনে গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা রাখছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আবিস্কার করে সোহাগের মতো প্রানবন্ত হোস্ট। এগিয়ে যাক দেশের পর্যটন শিল্প, এগিয়ে যাক টিজিবি।


Hasan Ahammed Sohag
Traveller
26-May-2022