অনেকটা হুট করেই হুজুকের মাথায় এই ট্যুরের ডিসিশন নেওয়া,অভিজ্ঞতা বলতে মাত্র ১ মাস আগে অমিয়াখুম-নাফাখুম ট্যুর, এই টিজিবির সাথেই।সেই ট্যুরেই পাহাড়ের নাম দুটো মাথায় একদম সেট করে দিয়েছিলেন Kiron ভাই আর সেই ট্যুরের অভিজ্ঞতা থেকেই এই ট্যুরের সাহস পাওয়া।
১২ ডিসেম্বর রাতে মনে হয় এই শহরের অর্ধেক মানুষ ঢাকা ছেড়েছিলেন যার প্রমান ছিল সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড,রাত ৮ টা পর্যন্ত ডিউটি খানিক আগেই শেষ করে মিরপুর থেকে সায়দাবাদ যেতেই মনে হয়েছিল আমার ট্যুরের অর্ধেক এক্সসাইটমেন্ট এখানেই শেষ
যাই হোক বাস স্ট্যাণ্ডে পরিচিত হাসি মুখগুলা আর সবার ব্যাকপ্যাক দেখেই আবার #ট্যুর_মুড_রিলোডেড।
বাসে উঠেই পেলাম #টিজিবি এর নতুন সংযোজন তাদের নিজস্ব রেস্টুরেন্টের স্যান্ডউইচ এবং পানিরিভিউ দেওয়ার কথা ছিল,স্যান্ডউইচ খাওয়া হয়নি তাই রিভিও দিতে পারলাম না,একদিন রেস্টুরেন্টে যেয়ে খেয়ে আসবো ইনশাআল্লাহ
তাদের রেস্টুরেন্টের জন্য রইল শুভকামনা
বান্দরবন শহরে নেমে দেখি তাপমাত্রা ১২°
ট্র্যাকিং ট্যুর হওয়ায় ব্যাগের ওজন কমানোর জন্য ঠান্ডার কাপড় তেমন নিয়ে যাইনি,যাওয়ার পর পুরাই ফ্রিজিং কন্ডিশনে চলে গিয়েছিলাম
বান্দরবন শহর থেকে ব্রেকফাস্ট করে চান্দের গাড়ির উপরে বাতাস খাইতে খাইতে আর গান গাইতে গাইতে দেখি চলে আসছি থানচি।পথে দুই জায়গায় আর্মিচেক পোস্ট ছিল,ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি জমা আর টুকটাক কিছু ফরমালিটি আছে সেখানে।কোন সমস্যা হয়না,গাইডের হেল্প নিয়ে ইজিলি করতে পারবেন।
এরপর নৌকায় রেমাক্রির উদ্দেশ্য রওনা,দুই ঘন্টার মত সময় লাগে,যারা এই পথে গিয়েছেন তারা তো জানেন এটি বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর একটা র্যুট,আর যারা যাননি তাদের কাছে অনুরোধ রইল একবার হলেও নিজ চোখে দেখে আসুন এই সৌন্দর্যকে।
রেমাক্রি থেকেই আমাদের আসল ট্যুর শুরু আসলে,রেমাক্রি থেকে দলিয়ান পাড়া প্রায় ৩ ঘন্টার ট্র্যাকিং,তেমন কঠিন না কিন্তু ভারী ব্যাগ নিয়ে উঠতে একটু কস্ট হয়ে যায় এই আর কি।সন্ধ্যার একটু পরেই দলিয়ান পাড়াই পৌঁছায় আমরা, ছিলাম হেডম্যান লালা বম এর বাড়িতে।থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা এই পাড়া অনুযায়ী অনেক অনেক ভাল।কলের পানি পাওয়া যায় কিন্তু গোসলের জন্য
পর দিন ১৪ তারিখ ভোর ৫টাই শুরু হয় #জৌতলং এর জন্য আমাদের ২২ জনের ট্র্যাকিং।ট্র্যাকিং নিয়ে কিছু লেখার নেই,যার যার ফিজিকাল এবিলিটির উপর এটা ডিপেন্ড করে।মোটামুটি ১২/১৩+ ঘন্টা হাটার মানুষিক প্রস্তুতি নিয়ে হাটা শুরু করতে হবেআমার যদিও অনেক বেশি লেগেছিল। পাড়ায় ফিরে দেখি আমাদের গ্রুপের যারা আগে ফিরেছিলেন তারা মহাসমারোহে পাহাড়ি মুরগির মাংস রান্না করছেন নিজ উদ্যোগেসেই রান্নার স্বাদ আমাদের ২২ জনের কারও পক্ষেই কোনদিন ভোলা সম্ভব হবে না বলে আমার বিশ্বাস।
১৫ তারিখ আমরা ১৬ জন #যোগীহাফং এর জন্য বের হই এবং শেষ পর্যন্ত ১০ জন সর্বশেষ পিকে পৌঁছায়।৪ নং পিকের আগে প্রায় ১২০০ ফুট উঁচু ২০০ মিটার রিজলাইন পার হওয়া আমার জীবনের অন্যতম একটা এক্সপেরিয়েন্স হয়ে থাকবে।
পারসোনালি আমার কাছে যোগীহাফং অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং এবং ভিউয়ের দিক থেকে বেস্ট মনে হয়েছে।
আর আমার কাছে কোন ট্র্যাকিং এর সব চেয়ে কঠিন পথ হল পাড়ার পাহাড় উঠা
এখন আসি আমাদের হোস্ট Ashiqul Haque Aashique ভাইয়ের কথায়,আল্লাহ এই মানুষটাকে এত এত ধৈর্য্য দিয়েছেন,মাশাল্লাহ ।আমি পারসনালি সিক থাকায় অনেক অনেক বেশি সময় নিয়ে ট্র্যাক করেছি,মাঝখানে কিছু সময় হাটা বন্ধ ও করে দিয়েছিলাম,কিন্তু এই মানুষটা একবারের জন্য ও বলেননি আপু তাড়াতাড়ি করেন বা আপু আপনার জন্য সমস্যা হচ্ছে।উল্টো জৌতলং থেকে ফেরার দিন রাত হয়ে যাওয়ার পর ও আমরা টর্চ লাইট বন্ধ করে আকাশ ভর্তি তারা দেখছি।এমনকি পরের দিন যোগিতে যাওয়ার সময় অনেকেই যখন যাচ্ছিল না,ভাইয়া একবার ও আমাকে বলেন নি আপু আপনি থেকে যানউল্টো আমাকে বলছে আমার সাথে থাকলে শেষ চূড়া পর্যন্ত অবশ্যই সবাইকে নিয়ে যাব&he kept his promise।আসার পথে পুরো রাস্তায় আমরা পাড়ায় ব্যাক করে কি কি খাব সেই প্ল্যান করতে করতে আর চাদের আলো দেখতে দেখতেই পাড়ায় চলে আসি।এই রাস্তায় রাতে ব্যাক করা হল অনেকটাই বিভিষীকা,কিন্তু একটা ভাল দিক হল কি জানেন, পুরো রাস্তা অন্ধকারে না দেখা যাওয়ায় ভয় অনেকটাই কমে যায়
এরপর দলিয়ান পাড়া থেকে ব্যাক করার দিনেও আমরা চিলিং ম্যুডে ছবি ছবি তুলতে তুলতে আর আস্তে আস্তে হাটতে হাটতে ব্যাক করি উইথ আওয়ার কুলেস্ট তামিল হিরো #আশিক ভাই।টিজিবি এখন আমার কাছে আর কোন ট্যুর আ্যারঞ্জিং গ্রুপ না,#Its_a_family।আর আমরা যারা শেষে একসাথে হাটছিলাম তাদের নিজস্ব নামকরনের এক্টা গ্রুপ ও হয়ে গিয়েছিল..."ধ**চা ট্র্যাকার"
And yes I'm pround Member of that "D" group
আমরা যে র্যুট ফলো করেছিলামঃ
ঢাকা>বান্দরবন>থানচি>রেমাক্রি>দলিয়ানপাড়া>জৌতলং>দলিয়ানপাড়া>যোগিহাফং>দলিয়ানপাড়া>রেমাক্রি>থানচি>বান্দরবন>ঢাকা।
এই ট্যুরটি একদম শুরু থেকে শেষ পুরোটাই ট্র্যাকিং ট্যুর।অনেকের মতেই বাংলাদেশের সবচেয়ে ট্রিকি এবং অফ ট্র্যাক।পাহাড়কে না ভালবাসলে এই ট্যুর সম্ভব নাহ।অনেকখানি রাস্তা আপনাকে দড়ি এবং বাশের সহায়তায় উঠতে হবে, তাই শারিরীক সুস্থতা এবং মনের জোর দুটোই দরকার এইরকম ট্রিপে।তাই এই ট্রিপে যাওয়ার কিছুদিন আগে থেকেই একটু প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।শীতকালে যাওয়ার প্ল্যান থাকলে শীতের কাপড়,সিপ্লিং ব্যাগ,গ্ল্যাভস,মোজা এগুলো নিয়ে যাওয়া উচিত,সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণ খেজুর,বাদাম,কিশমিশ,চকলেট এবং ফাস্টএইড ও ব্যাথার ঔষধ নিয়ে নিবেন।
এখানকার রাস্তাগুলো কিন্তু অনেক ট্রিকি, তাই গাইড দাদারাও মাঝেমাঝে কনফিউজড হয়ে যেতে পারেন,তাদের উপর আস্থা রাখুন,তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করুন, ঐ পাহাড়ি রাস্তায় তারাই কিন্তু অনেকটা ভরসার জায়গা।আর দলিয়ান পাড়া এবং ট্র্যাকের রাস্তা দুটোই অনেক পরিষ্কার ছিল,আমারা ও চেস্টা করেছি আমাদের ব্যবহার্য সকলপ্রকার প্লাস্টিকের প্যাকেট, বোতল নিজেরা নিয়ে এসে সঠিক জায়গায় ফেলতে।কোথাও ঘুরতে গেলে পরিবেশকে সুন্দর রাখা আমাদের সকলের দায়িত্ব
এই জায়গায়গুলোতে কিন্তু আপনি একাএকা বা সবসময় যেতে পারবেন না ।আমার মতে শীতকাল হল পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখার পারফেক্ট সময়,সামনে টিজিবির আর একটা ইভেন্ট থাকার কথা #যোগী_জৌতলং এ ।দেরি না করে তাহলে ঘুরে আসুন আর দেখে আসুন পাহাড়ের এই বুনো সৌন্দর্যকে